সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: সরকারি চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ বাণিজ্যের তকমা লেগেছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কয়েকটি ধাপে এই প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী-অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন ১৭৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। অস্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও দাপ্তরিক কাজ নেই তেমন। ফলে হাজিরা না দিয়েও প্রতিমাসে বেতন যাচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেটে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুমোদন প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে বিশাল নিয়োগের বিষয়টি জানে না মঞ্জুরী কমিশন। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান এতো লোক নিয়োগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমিতো হতবাক! বিষয়টি জানা ছিল না। শুনেছি একটি পত্রিকায় নিয়োগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সিলেট থেকে আমাকে ফোন দিয়েছিল একজন। কেউ লিখিতভাবে আমাদের অভিযোগও জানায়নি।’
অনুমোদন না পেলে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা যাচ্ছে কিভাবে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শ্যামল সিলেটকে বলেন, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে ফান্ড ক্রিয়েট করা হয়। ফান্ডে টাকা বরাদ্দ একটি রুটিন ওয়ার্ক। অন্য কোনো ফান্ডের টাকা থেকে বেতন দেওয়া হলে সেটি আমাদের জানা থাকার কথা নয়। একমাত্র অভিযোগ পেলে তদারকির মাধ্যমেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।’
তদন্তে সত্যতা প্রমাণ হলে কি হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের পর আমাদের কাজ হবে, মন্ত্রণায়কে রিপোর্ট পেশ করা।’
সরকারি বিধিলঙ্ঘন করে নিয়োগকৃতদের অনেকের পদবীর বিপরীতে যোগ্যতা নেই। কম্পিউটার জ্ঞান নেই নিয়োগপ্রাপ্ত অপারেটরের। জনসংযোগ কর্মকর্তার ধারণা নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। নিজ পরিবার, স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পছন্দসই পদে।
রোববার‘যাত্রালগ্নেই জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে মন্ত্রণালয়ের। তোলপাড় চলে সবখানে। এ ঘটনা তদন্তে রোববার রাতে সিলেটে এসে পৌঁছান তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের প্রধান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহাদাত হোসেন। প্রতিনিধি দলের আরও দু’জন সদস্য আজ সোমবার সকালে এসে সিলেট পৌঁছাবেন। রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি প্রচলিত নিয়োগনীতি। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল নিয়োগের প্রথম প্রস্তাব উঠে একাডেমিক কাউন্সিলে। সেখান থেকে প্রস্তাব পাশ হয় সিন্ডিকেট সভায়। সিন্ডিকেট সভা লোকবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে পাঠিয়ে দেয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান মঞ্জুরী কমিশনে। মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদনের পরপরই লোকবলের বিষয়টি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যদিও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো বড় নিয়োগের বিষয়টি জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন। তার উপর অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অযোগ্য লোকদের স্থান দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের নিয়োগ পেয়েছেন অন্তত ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ভিসি এবং রেজিস্ট্রারের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ স্থানও পেয়েছে এই অঞ্চল। আর প্রকল্প পরিচালক হতে দৌঁড়ঝাঁপ অব্যাহত রয়েছে ভিসির শ্বশুরালয়ের নিকটাত্মীয়দের। পদবী না পেলেও মাঝে-মধ্যে অস্থায়ী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন একজন স্বজন। এছাড়াও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৩য় গ্রেডের একজন কর্মচারীকে দেওয়া হয়েছে সহকারী পরিচালকের (অর্থ) পদ। ওই সহকারী পরিচালকের নাম আবদুস সবুর। অভিযোগ রয়েছে ভিসি নিজ সুবিধার জন্য বিশ্বস্ত লোক হিসেবে ওই পদে সবুরের নিয়োগ কার্যকর করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মঞ্জুরী কমিশনের পরিচালক মোহাম্মদ জামিলুর রহমান বলেন, ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ জানালে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এবিএ/১৩